মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ

‘গাজা’ জ্বলছে। আল আকসা আক্রান্ত। ক্ষিপ্ত, বিক্ষুব্ধ মুসলমান সহ বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই কতৃত্ববাদী আধিপত্যের নিন্দা ও পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করছে। খুশির ঈদের মাঝেও তাই আজ হাহাকার ও বেদনার বদন।

কিছু মৌলিক প্রশ্ন তিরোহিত করে বেড়াচ্ছে। প্যালিস্টাইনের জমি ফিরে পাওয়া, আল আকসার দখল বুঝে নেওয়া সহ অনেক ইস্যুর আধার এই প্রশ্নগুলোতে ঘূর্ণ মান।

১। আন্তর্জাতিক সমন্বয় বিবেচনায় পনের বছর আগের প্যালেস্টাইনের চেয়ে বর্তমান প্যালেস্টাইন আরো দূর্বল বৈকি। এই নিম্নগামীতার কারণ কি?

২। ইয়াসির আরফাত বছরের অর্ধেক সময় বিশ্বভ্রমণ করত কূটনৈতিক কৌশলের জন্য, মুসলিম রাষ্ট্র, সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের সাথে সম্পর্ক মানোন্নয়নের জন্য। মাহমুদ আব্বাস কি করছে?

৩। লেবানন ভিক্তিক হিজবুল্লাহ’র শক্তি হামাসের চেয়ে বেশি বৈ কম না। হিজবুল্লাহ আর হামাসের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কি? হিজবুল্লাহ প্যালেস্টাইন প্রশ্নে চুপ কেন?

৪। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঐক্য কিংবা সবচেয়ে বড় হ্যাশট্যাগ আন্দোলন স্বত্বেও বিশ্ব মোড়লদের টনক নড়েনা। উপরিঅন্তু, আমেরিকা সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ইসরাইলের আত্নরক্ষার কৌশল হিসেবে আগ্রাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, দিচ্ছে। কেন?

৫। বিশ্বের সব ইসলামি পরাশক্তি (তুরস্ক সহ) ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক করেছে। কেন, কি মোহ?

৬। ‘মোসাদ’ বিশ্বের অন্যতম ধুরন্ধর গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের কিছুটা ছায়া বর্তমানে ভারতের ‘র’ তে পড়ছে। হামাসের মধ্যে যে মোসাদের স্পাই/এজেন্ট নেয়, সে কথা কি তিরোধিত করা সম্ভব?

৭। হামাসের বেশিরভাগ রকেট হামলা লক্ষ্যে না পৌছে ভূমধ্যসাগরে পতিত হচ্ছে কেন?

৮। দশকের পর দশক নিরস্ত্র প্যালেস্টাইনিদের প্রকৃত দেশপ্রেম সবার হৃদয় স্পর্শ করছে কিন্তু জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন গুলো বিবৃতির বাইরে কি করেছে?

৯। আরব লীগ, ওআইসি ধমক দিতে ভয় পায় কেন?

১০। ইসরায়েলের পণ্যের অধিকাংশই অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশের ট্যাগ হয়ে আসে। ‘মেইড ইন ইসরাইল’ লিখা না থাকলেও পণ্য ইসরায়েলের। তদুপরি, বিশ্বের সবপ্রান্তের ইহুদিরা নিজের দেশ মনে করে ইসরাইল কে। এই বাস্তবতায় অর্থ, অস্ত্র, গোপন ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডার সব তাদের হাতে। এই বিশাল শক্তি মোকাবিলায় প্যালেস্টাইন কতটুকু জ্ঞান, অর্থ, অস্ত্র, প্রযুক্তি কে সমন্বিত করতে পেরেছে?

আমরা আর্তনাদ করতে পারি, ক্রন্দন করতে পারি। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা প্যালেস্টাইন স্বাধীন হওয়ার শীঘ্রই আভাস দেয়না। বিশ্বের সব শক্তিশালী মুসলিম দেশ, সমাজতান্ত্রিক দেশের ঐক্য ছাড়া অর্জনের পথ দূর্গম, বন্ধুর।

আমরা প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা, আল আকসার প্রাপ্য দখলদারিত্ব চাই। কিন্তু শূণ্যস্থান, প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করলেই সমাধান সম্ভব। আরব নেতারাও এই গ্যাপগুলো জানেন। কিন্তু ইগো ও সম্মানহানির আবদ্ধতা তাদের ঐক্যের অন্তরায়। আর এই ফাটলকেই পুষছে মোড়লরা। ত্যাগের মহিমা না জাগলে মানচিত্রে সবুজায়ন (ফিলিস্তিন) কমতেই থাকবে।।